মোঃ সেলিম রেজাঃ
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরই গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বর্ণি ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম অনেকটা ভেঙ্গে পড়েছে। নাশকতা মামলার আসামি হিসেবে ওই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মিলিয়া আমিনুল গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছেন আত্মগোপনে।
তবে পালিয়ে থেকে অজ্ঞাত স্থান থেকে স্বাক্ষর দিয়ে অফিস করছেন তিনি।
এমতাবস্থায় ইউপি চেয়ারম্যান মিলিয়া আমিনুলের বিরুদ্ধে ্পরিষদে অনুপস্থিত থাকার বিষয় জানিয়ে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন পরিষদের আট জন মেম্বার। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রানি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ প্রকাশ বিশ্বাসকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
এ বিষয় অভিযোগকারী আট জন ্মেম্বার মোঃ ইমরুল সরদার, মোঃ শরিফুল ইসলাম মোঃ রিপন শেখ মোসাঃ বিলকিস খানম, মোঃ সিদ্দিক মোল্লা, মোঃ সামাদ মুন্সী, মোঃ সোহরাফ হোসেন ও মোঃ বাদশা মোল্যার অভিযোগে জানাগেছে, নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মিলিয়া আমিনুলের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নাশকতা মামলা হওয়ায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ জনগণের কাছে তাদের কোনো খোঁজখবর নেই। চেয়ারম্যান আত্মগোপনে থাকায় সঠিক সময়ে কাঙ্খিত নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তৃণমূলের মানুষ। যথাসময়ে পাচ্ছেন না জন্ম নিবন্ধন সনদ, মৃত্যু নিবন্ধন, নাগরিকত্ব সনদ, ট্রেড লাইসেন্স, উত্তরাধিকার সনদ, মাসিক/বাৎসরিক আয়ের সনদ, অবিবাহিত সনদ, চারিত্রিক সনদ পুনঃবিবাহ না হওয়ার সনদসহ অন্যান্য সনদ ও প্রত্যয়নপত্র। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবাগ্রহীতারা। ফলে প্রতিদিন ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে।
আত্মগোপনে থেকেও চেয়ারম্যান সাধারণ মানুষের নানা সনদ ও প্রত্যয়নপত্রে স্বাক্ষর করছেন বলে জানিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের সচিব।
বর্ণি ইউনিয়নের মুন্সিরচর গ্রামের ফরহাদ মুন্সি বলেন, ‘আমি আমার ছেলের জন্ম নিবন্ধন করতে এসে চেয়ারম্যানকে না পেয়ে বারবার ফিরে যাচ্ছি। ছেলের জন্ম নিবন্ধন সনদ না পেয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। একই ইউনিয়নের টিপু সুলতান বলেন, ‘আমি নাগরিক সনদের জন্য একাধিক দিন এসেছি। আজও চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরের জন্য সনদটি পাইনি। কবে পাবো জানি না।’
ওই ইউনিয়ন পরিষদের সচিব শেখ মাহমুদুল হাসান বলেন, আমি সচিব হিসেবে পরিষদে নতুন যোগদান করেছি। পরিষদে প্রায় এক মাস আসলেও চেয়ারম্যানের সাথে আমার এখনও দেখা হয়নি। পরিষদের কাগজ পত্র চেয়ারম্যানের স্বামী এসে নিয়ে যায়, পরবর্তীতে অজ্ঞাত স্থান থেকে চেয়ারম্যানকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে পরিষদে এসে জমা দেন।
ইউপি মেম্বার মোঃ শরিফুল ইসলাম বলেন, নাশকতা মামলায় চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকায় পরিষদের সকল কার্যক্রম ভেঙ্গে পড়েছে। জনগন চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। মেম্বারদের দাবি চেয়ারম্যান যেহুতু অনুপস্থিত সেক্ষেত্রে প্যানেল চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দিলে ইউনিয়ন পরিষদের স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরে আসবে।
এ বিষয়ে উপজেলা মহিলা আ’লীগ সহ – সভাপতি ও বর্ণি ইউপি চেয়ারম্যান মিলিয়া আমিনুল মোবাইল ফোনে অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, মামলার কারনে গা ঢাকা দিয়ে থাকলেও ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম থেমে নেই। ইউনিয়ন পরিষদে না আসলেও বাইরে থেকে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
এ ব্যাপারে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মঈনুল হক জানান, বর্ণি ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে প্রানীসম্পদ কর্মকর্তাকে আমরা তদন্তের দায়িত্ব দেই। তদন্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে তদন্ত প্রতিবেদন পেয়ে আমরা ২৪ মে শনিবার ডিসি স্যার বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করি। ডিসি স্যার স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় পাঠাবেন সেখান থেকে সিদ্ধান্ত আসবে।
Leave a Reply